বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
দেবী দুর্গা হলেন অসুর নিধনকারী শক্তির প্রতীক। হিন্দু পুরাণে বলা হয়, মহিষাসুর নামক অসুর যখন দেবতা ও মানব জাতির ওপর অত্যাচার শুরু করে, তখন দেবতারা একত্র হয়ে মা দুর্গার সৃষ্টি করেন। তিনি মহিষাসুর বধ করে ধর্ম ও ন্যায়ের বিজয় ঘটান।
এই কারণেই দুর্গা পূজা হলো সত্যের জয়, শক্তির পূজা ও অন্যায়ের পরাজয়ের প্রতীক।
মহালয়া: দেবীর আগমনী বার্তা। এই দিনে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে পূজার সূচনা হয়।
ষষ্ঠী: দেবীর বোধন ও আমন্ত্রণ।
সপ্তমী: নবপত্রিকা স্নান, দেবী স্থাপন।
অষ্টমী: কুমারী পূজা, মহাপূজা ও সন্ধিপূজা।
নবমী: হোমযজ্ঞ ও দেবীর আরাধনা।
দশমী (বিজয়া): দেবীর বিসর্জন ও বিজয়া শোভাযাত্রা।
বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রতিবছর দুর্গা পূজা পালন করেন।
২০২৫ সালে সারা দেশে প্রায় ৩৩,০০০ পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরে পূজার মণ্ডপের সংখ্যা ২৫০টিরও বেশি।
সবচেয়ে বড় আয়োজন: ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার বনানী পূজামণ্ডপ, চট্টগ্রামের জে এম সেন হল, খুলনা ও রাজশাহীর কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ।
দুর্গা পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক।
মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন।
গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়-পাড়ায় মানুষ একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
পূজা ঘিরে তৈরি হয় বিশাল অর্থনৈতিক বাজার—
প্রতিমা শিল্প: কুমারপাড়ায় ব্যস্ত সময়, একেকটি প্রতিমার দাম ৫০,০০০–২ লাখ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ও ফ্যাশন: নতুন পোশাক, গহনা, প্রসাধনী বিক্রি বেড়ে যায়।
খাদ্য ও মিষ্টান্ন: দোকানগুলোতে ভিড়, নতুন রেসিপি ও প্রসাদ বিতরণ।
পর্যটন: বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটক আসেন।
দুর্গা পূজায় গান, নাচ, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকসজ্জা ও প্রতিযোগিতা হয়।
বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য যেমন—
আগমনী গান
ঢাকের বাদ্য
আলপনা শিল্প
শোভাযাত্রা
সবকিছু মিলে এক অসাধারণ রঙিন পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী:
প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ও র্যাবের মোতায়েন
সিসিটিভি ক্যামেরা
ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত
স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধান
দুর্গা পূজার পরপরই কোজাগরী পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদের দেবী।
প্রতিটি ঘরে, বিশেষ করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এই পূজা হয়।
দীপাবলির রাতে, অমাবস্যায়, কালী দেবীর আরাধনা হয়।
তিনি শক্তি ও বিনাশের প্রতীক।
ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রামে বিশেষ আয়োজন দেখা যায়।
শিক্ষার দেবী সরস্বতীর পূজা বসন্ত পঞ্চমীতে পালিত হয়।
বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পূজার আনন্দ অপরিসীম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি।
দেশব্যাপী শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা ও ভক্তি সংগীত পরিবেশিত হয়।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বিশাল আকারে পালিত হয়।
বিশেষ করে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, পুরান ঢাকায় রথযাত্রা উৎসব বিখ্যাত।
বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় এই উৎসব পালন করে।
রাষ্ট্রীয়ভাবেও পূজার ছুটি ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন, শুভেচ্ছা বার্তা দেন।
প্রতিমা ও মণ্ডপে আধুনিক আলোকসজ্জা, থিম-ভিত্তিক ডিজাইন, ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক গল্প তুলে ধরা হয়।
ঢাকায় দেখা যায়:
থিম “সোনার বাংলা”
থিম “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ”
পরিবেশবান্ধব প্রতিমা
তরুণ-তরুণীরা পূজার সাজে সাজে মেতে ওঠে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ছবি, ভিডিও, লাইভ অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, মঞ্চ নাটক ও নাচ-গানেও সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে।
দুর্গা পূজা শেখায়—
ন্যায়ের পথে চলা
অসুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
নারী শক্তির সম্মান
সাম্যের বার্তা
মহিষাসুর হলো অজ্ঞতা, লোভ, অহংকার, হিংসা।
দেবী দুর্গা প্রতীক জ্ঞান, প্রেম, ন্যায়, শক্তি।
প্রতি বছর এই পূজা মানুষকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয়।
পূজা মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা, স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ,
অনলাইন আরতি ও ভার্চুয়াল পূজা প্রচলন হয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দেমাতরম”, রবীন্দ্রনাথের গান, আগমনী সঙ্গীত পূজার পরিবেশকে মুগ্ধ করে।
বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ পূজা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।
দশমীর দিন দেবীকে বিদায় দিয়ে বিজয়া দশমী পালন করা হয়।
আশীর্বাদ বিনিময়, মিষ্টি বিতরণ ও আলিঙ্গনের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
বাংলাদেশ সরকার পূজার সময় ছুটি ঘোষণা করে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
এটি সংবিধান নির্ধারিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক।
দুর্গা পূজা শুধু দেবী আরাধনা নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মানবিকতার উৎসব।
হিন্দু-মুসলমানসহ সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসবে মিলিত হয়,
যা বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজকে আরও শক্তিশালী করে।